প্যারাসিটামল এর ব্যবহার

প্যারাসিটামল হল একটি ট্যাবলেট যা হালকা বেদনানাশক বিভাগের অধীনে পড়ে। এটি সাধারণত হালকা জ্বর কমানোর জন্য ব্যবহার করা হয়। তবে, এটি পিঠ ব্যথা, পেটে ব্যথা, আর্থরাইটিস, দাঁত ব্যাথা ও মাথা ব্যাথা উপশম করার জন্যও ব্যবহৃত হয়। এটি একটি ট্যাবলেট এবং তাই এটিকে মুখ দিয়ে গ্রহণ করা আবশ্যক। ওষুধটি কোনও গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে না তবে, এই ওষুধের অপব্যাবহার যকৃতের ক্ষতির সম্ভাবনা বাড়ায়।



খুব বিরল ক্ষেত্রে, প্যারাসিটামল থেকে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে। পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার মধ্যে বমি, চামড়াতে ফুসকুড়ি, পেট ব্যথা, এবং ক্ষুধামান্দ্য অন্তর্ভুক্ত। যদি কোন লোক এই ওষুধের থেকে অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া অনুভব করে তবে তার মানে তাদের ক্ষেত্রে এই ওষুধ গ্রহণ করা উচিত নয়। প্যারাসিটামল একটি ওটিসি ট্যাবলেট, অনেকজন এলোমেলোভাবে এটি ব্যবহার করতে থাকে এবং যেটি ভাল নয়। কোন ওষুধ গ্রহণ করার আগে ডাক্তারের সাথে কথা বলা সবসময় ভাল।

প্যারাসিটামল কখন নিতে হয় 


প্যারাসিটামলের ক্ষতিকর প্রভাবগুলি কি কি?



কাদের প্যারাসিটামল খাওয়া উচিত নয় :

যদি আপনার প্যারাসিটামল এ অ্যালার্জি থাকে, তাহলে আপনার এটি গ্রহণ করা উচিত নয়।


লিভারের সমস্যা: যদি আপনার লিভারে সমস্যা থাকে বা আপনি লিভারের রোগে আক্রান্ত হন, তাহলে প্যারাসিটামল ব্যবহার করা উচিত নয় বা এর ব্যবহার সীমাবদ্ধ করা উচিত, কারণ অতিরিক্ত ব্যবহার লিভারের ক্ষতি হতে পারে।


গর্ভাবস্থা এবং বুকের দুধ খাওয়ানো: প্যারাসিটামল সাধারণত গর্ভাবস্থায় এবং স্তন্যপান করানোর সময় নিরাপদ হওয়া উচিত বলে বিবেচিত হয়, তবে যদি প্রয়োজন হয় তবে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সাথে পরামর্শ করতে হবে যেভাবে এর উপযুক্ত ডোজ হওয়া উচিত।


দীর্ঘস্থায়ী চিকিৎসা শর্ত: আপনার যদি কিছু দীর্ঘস্থায়ী চিকিৎসার অবস্থা থাকে, যেমন কিডনির সমস্যা, তাহলে প্যারাসিটামল গ্রহণ করার আগে আপনার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সাথে পরামর্শ করা উচিত, কারণ এটি কিডনির কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করতে পারে।

প্যারাসিটামল গ্রহণের সময় সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত যাদের :

প্যারাসিটামল ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করার উদ্দেশ্যে। আপনার যদি ওষুধ বা ওষুধে উপস্থিত কোনো উপাদানে অ্যালার্জি থাকে তবে ডাক্তারকে জানান। যদি আপনার লিভারের রোগ থাকে বা আপনি প্রতিদিন মদ পান করেন তবে ওষুধটিও এড়ানো উচিত। কিছু রোগ রয়েছে যা ওষুধ খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে প্রকাশ করা উচিত। এগুলো হল :


- লিভার ডিজিজ

- কিডনির ব্যাধি

- পেশী দুর্বল

- হার্টবিট ব্যাধি

- রক্তে পটাসিয়াম কম মাত্রা

প্যারাসিটামলের একটি ডোজ মিস হলে কি করবেন 


যদি আপনি প্যারাসিটামলের একটি ডোজ মিস করেন, তবে এটি আপনার শরীরে খুব বেশি প্রতিক্রিয়া করবে না কারণ এটি একটি হালকা ঔষধ। এড়িয়ে চলার ডোজ কোনো সমস্যা সৃষ্টি করবে না। এছাড়াও, আপনি যদি আপনার আগের ডোজ মিস করেন তবে ডবল ডোজ গ্রহণ করবেন না। 

প্যারাসিটামল অতিরিক্ত মাত্রায় গ্রহণ করলে যা হতে পারে 

প্যারাসিটামলের মতো ওষুধের অতিরিক্ত ব্যবহার লিভার বা কিডনির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। আপনি যদি নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে বেশি ট্যাবলেট গ্রহণ করেন তবে তা শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এটি শরীরের কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে এবং অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া, আমবাত, গলা ফোলা, গুরুতর চর্মরোগ এবং অন্যান্য অনেক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। আপনার শরীর বা ত্বকে কোনো ধরনের অ্যালার্জি থাকলে এই ওষুধটি গ্রহণ করবেন না।


শিশুদের জন্য প্যারাসিটামলের ব্যবহার

শিশুদের জন্য বিভিন্ন ধরনের প্যারাসিটামল আছে। শিশুর বয়সের ওপর, এমনকি কখনও কখনও শিশুর ওজনের ওপর নির্ভর করে কোন শক্তিমাত্রার প্যারাসিটামল কত ডোজে খাওয়ানো হবে। তাই শিশুকে প্যারাসিটামল খাওয়ানোর আগে সবসময় ঔষধের সাথে থাকা নির্দেশিকা ভালো করে পড়ে নিতে হবে।


সাধারণত ট্যাবলেট অথবা সিরাপ খাওয়ানোর আধা ঘণ্টার মধ্যে শিশু কিছুটা ভাল বোধ করতে শুরু করে। আর সাপোজিটরি পুরোপুরি কাজ করতে এক ঘণ্টা পর্যন্ত সময় নিতে পারে।


প্যারাসিটামল ছোট-বড় সবার ব্যথা ও জ্বরের চিকিৎসায় বহুল ব্যবহৃত একটি ঔষধ। তবে অন্য সব ঔষধের মতো এটিও মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে সেবন করলে তা শিশুর জন্য বিপদজনক হতে পারে। তাই প্যারাসিটামলসহ সব ধরনের ঔষধ সবসময় শিশুদের নাগালের বাইরে রাখতে হবে।


বাংলাদেশে প্যারাসিটামলের পরিচিত ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে রয়েছে Napa, Xcel,এইস, ফাস্ট, এটিপি, প্যারাপাইরল, পাইরালজিন, রিসেট, রেনোভা, ট্যামেন,  ও Xpa….


শিশুকে কোন বয়সে কোন ধরনের প্যারাসিটামল খাওয়ানো যাবে:


শিশুদের ২ মাস বয়স থেকে সিরাপ খাওয়ানো যাবে এবং সাপোজিটরিও ব্যবহার করা যাবে। ৬ বছর বয়স থেকে শিশুকে ট্যাবলেট খাওয়ানো যায়। তবে ট্যাবলেট গিলতে সমস্যা হলে সিরাপ খাওয়ানো যেতে পারে।


২ মাসের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে সতর্কতা:


দুই মাসের কম বয়সী শিশুদের প্যারাসিটামল দেওয়া উচিত নয় ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া। 


পাঁচটি ক্ষেত্রে শিশুকে প্যারাসিটামল খাওয়াবেন না ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া 


১. শিশু বয়সের তুলনায় আকারে ছোট অথবা ওজনে কম হলে

২. লিভার অথবা কিডনির সমস্যা থাকলে

৩. খিঁচুনি রোগের ঔষধ সেবন করলে

৪. টিবি রোগের জন্য ঔষধ সেবন করলে

৫. রক্ত পাতলা করার ঔষধ সেবন করলে


 প্যারাসিটামলের ইতিকথা 


জ্বর বা ব্যথা উপশমের জন্য আমাদের দেশের সর্বাধিক প্রচলিত যে ওষুধ তার নাম প্যারাসিটামল। বিভিন্ন ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি এটিকে বিভিন্নভাবে নামকরণ করে, যেমন নাপা, এইস, বা পাইরালজিন। জ্বর ও ব্যথার ওষুধ প্যারাসিটামল সম্পর্কে  জানার পরিধি আরও বাড়ালে সবার উপকার হবে।


প্যারাসিটামল মাথাব্যথা, জ্বর, মাইগ্রেন, দাঁতে ব্যথা এবং মাসেল পেইনের জন্য খুবই উপকারী। কিন্তু যদি অতিরিক্ত পরিমাণে সেবন করা হয় তাহলে লিভারের কার্যকারিতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এমনকি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যাও দেখা দেয়। প্যারাসিটামল মূলত কাজ করে প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন তৈরীতে বাঁধা দানের মাধ্যমে এবং এটি শরীর ঠাণ্ডা করে।


পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সব ওষুধে থাকে, তাই বলে তো ওষুধ গ্রহণ থেকে বিরত থাকা যায় না। প্রয়োজনে পরিমিত পরিমাণে ওষুধ গ্রহণ করতে হবে। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্যারাসিটামলের ডোজ ৫০০ মিলিগ্রামের ট্যাবলেট একটি, কখনো প্রয়োজনে ২ টি। ২৪ ঘন্টায় ৪ গ্রাম বা ৪০০০ মিলিগ্রামের বেশি খাওয়া যাবে না।


শিশুদের ক্ষেত্রে বয়স এবং ওজন অনুযায়ী প্যারাসিটামল সিরাপ দিতে হবে। ৪ গ্রাম হচ্ছে সর্বোচ্চ মাত্রা। ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন পরামর্শ দিয়েছে, যদি শিশুর জ্বর ১০১.৩ ফারেনহাইটের বেশি থাকে তবেই প্যারাসিটামলের সাহায্য নেওয়া উচিত। ২০১০ সাল পর্যন্ত এটি ভাবা হতো যে গর্ভবতী মায়েদের জন্য প্যারাসিটামল নিরাপদ। সাম্প্রতিককালে আমেরিকার ফুড অ্যান্ড ড্রাগস প্যারাসিটামলের সাথে কোডিন ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করতে বলেছে, কারণ এতে মৃত্যুর আশংকা বেড়ে যায়।


কিছু বিজ্ঞানী রিপোর্ট করেছেন, প্যারাসিটামলের সাথে ক্যাফেইন গ্রহণ শরীরে বিষাক্ততার পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়ে লিভার ড্যামেজ করে দেয়। প্যারাসিটামল বা ব্যথানাশক যথাসম্ভব ব্যবহার না করা উচিত যেসব ক্ষেত্রে তা হলো:


– গর্ভাবস্থা


– শিশুকে বুকের দুধ দেন এমন মায়েরা


– রক্ত পাতলা করার ওষুধ খেতে থাকলে


– গ্যাস্ট্রিক বা আলসার থাকলে


ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শে গ্রহণ করা উচিত। আমাদের স্বাস্থ্যের দায়িত্ব অনেকটা আমাদের ওপর। এজন্য স্বনির্বাচিত ওষুধ গ্রহণে সতর্কতা অবলম্বন করুন।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম