মাইগ্রেন হলে করণীয় কি তা জানার জন্য মাইগ্রেন সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা থাকা দরকার।
মাইগ্রেন হল একটি জিনগতভাবে প্রভাবিত জটিল স্নায়বিক ব্যাধি যা মাঝারি থেকে গুরুতর মাথাব্যথার পর্ব দ্বারা চিহ্নিত করা হয়, প্রায়শই একতরফা এবং সাধারণত বমি বমি ভাব এবং আলো এবং শব্দ সংবেদনশীলতার সাথে যুক্ত। অন্যান্য বৈশিষ্ট্যযুক্ত লক্ষণগুলির মধ্যে বমি, জ্ঞানীয় কর্মহীনতা, অ্যালোডিনিয়া এবং মাথা ঘোরা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
মাইগ্রেন একটি বিশেষ ধরনের মাথাব্যথা, যা সাধারণত মাথার একপাশে তীব্র ব্যথা হিসাবে অনুভূত হয়। এটি শুধু মাথাব্যথা নয়, বরং অন্যান্য উপসর্গেরও সৃষ্টি করে। মাইগ্রেনের সময় আলো, শব্দ, বা গন্ধের প্রতি স্পর্শকাতরতা দেখা যায় এবং বমি বমি ভাব বা বমি হতে পারে।
মাইগ্রেনের লক্ষণ :
মাইগ্রেনের প্রধান লক্ষণগুলো হলো:
1. মাথার যন্ত্রণা:
সাধারণত মাথার একপাশে তীব্র ব্যথা হয়, যা কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েকদিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
2. বমি বমি ভাব ও বমি :
মাইগ্রেনের সাথে বমি বমি ভাব বা বমি হতে পারে।
3. আলো ও শব্দে সংবেদনশীলতা :
মাইগ্রেনের সময় আলো ও শব্দে সংবেদনশীলতা বেড়ে যায়।
4. অরা (Aura) :
কিছু ক্ষেত্রে মাইগ্রেনের আগে বা সঙ্গে সঙ্গে অরা দেখা দেয়, যা চোখের সামনে ঝিলমিল দেখা, হাত বা পায়ের সূঁচ ফোটার মত অনুভূতি, বা কথা বলার সমস্যার মাধ্যমে প্রকাশ পায়।
5. ক্লান্তি ও দুর্বলতা :
মাইগ্রেনের পর ক্লান্তি ও দুর্বলতা অনুভূত হতে পারে।
এছাড়াও, মাইগ্রেনের সময় মনোযোগের সমস্যা, ঘুমের সমস্যা, ও ক্ষুধা পরিবর্তন হতে পারে।
মাইগ্রেন কেন হয় :
চোখ, কান, নাক ও চোয়ালের জয়েন্টের সমস্যা, দুশ্চিন্তা, ব্রেইন টিউমার, মাইগ্রেন, ঘুমের অভাব এবং দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটারে বসে থাকার মতো বিভিন্ন কারণে মাথাব্যথা হতে পারে। এছাড়া, মস্তিষ্কের পর্দা বা মেনিনজেসে সমস্যা, মাথার হাড়ের মধ্যকার সাইনাসে প্রদাহ (সাইনোসাইটিস), বা মস্তিষ্কের রক্তনালিতে কোনো সমস্যা দেখা দিলে মাথাব্যথা হতে পারে।
করোনা রোগীরাও বিভিন্ন কারণে মাথাব্যথায় ভুগতে পারেন। শরীরে বিভিন্ন জীবাণুর সংক্রমণেও মাথাব্যথা হতে পারে।
কী করবেন মাথাব্যথা হলে সাধারণত আমরা নিউরোলজিস্টের পরামর্শ নিয়ে থাকি। তবে এর আগে চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত, কারণ তিনিই সঠিক চিকিৎসা দিতে পারবেন।
মাইগ্রেন হলে করণীয় :
মাইগ্রেন হলে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি নিতে পারেন:
1. শান্ত ও অন্ধকার স্থানে বিশ্রাম :
মাইগ্রেনের সময় আলো ও শব্দ থেকে দূরে সরে যান। শান্ত ও অন্ধকার স্থানে বিশ্রাম নিন।
2. পানীয় গ্রহণ :
পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করুন। ডিহাইড্রেশন মাইগ্রেনের কারণ হতে পারে।
3. ঠান্ডা বা গরম সেঁক:
কপালে ঠান্ডা বা গরম সেঁক দিতে পারেন। এটি ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
4. ওষুধ সেবন:
মাইগ্রেনের ব্যথার জন্য ওষুধ যেমন আইবুপ্রোফেন, এসিটামিনোফেন, বা ডাক্তারের পরামর্শমতো ট্রিপটান জাতীয় ওষুধ সেবন করতে পারেন।
5. ক্যাফেইন গ্রহণ :
কিছু ক্ষেত্রে ক্যাফেইন মাইগ্রেন কমাতে সহায়ক হতে পারে। তবে অতিরিক্ত ক্যাফেইন না খাওয়াই ভালো।
6. ম্যাসাজ :
মাথা, ঘাড় ও কাঁধে হালকা ম্যাসাজ করতে পারেন। এটি ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
7. শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম :
ধীর ও গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করুন। এটি স্ট্রেস কমাতে সহায়ক।
8. যোগব্যায়াম ও মেডিটেশন :
যোগব্যায়াম ও মেডিটেশন করতে পারেন। এটি মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
9. খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন :
কিছু খাবার মাইগ্রেনের কারণ হতে পারে। যেমন চকলেট, চিজ, এলকোহল ইত্যাদি। এগুলো এড়িয়ে চলুন।
10. ডাক্তার দেখান :
মাইগ্রেনের সমস্যা বেশি হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। তারা আপনার জন্য উপযুক্ত চিকিৎসা নির্ধারণ করতে পারবেন।
এছাড়া মাইগ্রেন প্রতিরোধের জন্য নিয়মিতভাবে বিশ্রাম নেয়া, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা, এবং নিয়মিত ব্যায়াম করা গুরুত্বপূর্ণ।
মাথার পেছনে ব্যথার কারণ কি :
অতিরিক্ত টেনশন মাথার পেছনে ব্যথার কারণ হতে পারে। অনেকেই ছোটখাটো বিষয় নিয়ে অতিরিক্ত টেনশন করেন, যা খুবই খারাপ অভ্যাস। যদি আপনার এই অভ্যাস থাকে, তাহলে এখনই সেটা ছাড়ুন।
অতিরিক্ত ক্ষুধা লাগা
মাথার পেছনের দিকে ব্যথা হওয়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে অতিরিক্ত ক্ষুধা লাগা। অনেকেই দীর্ঘ সময় পেটে ক্ষুধা নিয়ে ঘুরে বেড়ান। এতে শরীরের অনেকটা ক্ষতি হয়। হঠাৎ করে যখন ক্ষুধার্ত অবস্থায় খাবার খাই, তখন পেটে ব্যথাসহ শরীরে নানা সমস্যা দেখা দেয়। তাই এই অভ্যাস দ্রুত পরিবর্তনের চেষ্টা করুন।
শরীর দুর্বল লাগা
শারীরিক দুর্বলতার কারণেও মাথার পেছনে ব্যথা হতে পারে। কোনো ধরনের অসুস্থতা কিংবা ভিটামিনের অভাবে শরীর দুর্বল লাগতে পারে। এ জন্য প্রতিদিন পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে এবং সব সময় সুস্থ থাকার চেষ্টা করতে হবে।
উচ্চ রক্তচাপ
বর্তমান সময়ে উচ্চ রক্তচাপের রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। এটি মারাত্মক একটি সমস্যা। যদি কারও রক্তচাপ বেড়ে যায়, তাহলে মাথার পেছনের দিকে ব্যথা হতে পারে। তাই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করুন। যেসব খাবার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক, সেগুলো খেতে পারেন।
রক্তচাপ কম হলে
উচ্চ রক্তচাপের কারণে যেমন মাথার পেছনের দিকে ব্যথা হতে পারে, তেমনি রক্তচাপ কম হলেও এটি হতে পারে। তাই সব সময় রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করুন। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকলে এই ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে।
মানসিক চাপ
মাথার পেছনে ব্যথার আরেকটি কারণ হচ্ছে মানসিক চাপ। এটি খুবই মারাত্মক একটি সমস্যা, যা আপনাকে ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তাই শত কষ্টের মাঝেও হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করুন। মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকলে মাথার পেছনের ব্যথাও দূর হয়ে যাবে।
শারীরিক সমস্যা
শারীরিক বিভিন্ন সমস্যার কারণেও মাথার পেছনে ব্যথা হতে পারে। তাই শরীরে যদি কোনো সমস্যা থাকে, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নিরাময়ের চেষ্টা করুন। তাহলে এই সমস্যা থেকে অনেকটাই মুক্তি মিলতে পারে।
ঘুম কম হওয়া
পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়ার কারণে আমাদের শরীরে নানা রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে মাথার পেছনে ব্যথা হওয়া। ঘুম কম হলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়বে। সেই সঙ্গে ঘাড়ে ব্যথা, মাথাব্যথা এবং বমি বমি ভাব হতে পারে।
ধূমপান
ধূমপান আমাদের শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ধূমপান করলে ঘুম কমে যায় এবং টেনশন বেশি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আর টেনশন মানেই মাথার পেছনে ব্যথার কারণ। তাই নিজেকে ভালো রাখতে চাইলে ধূমপান ছাড়ুন।
আধ কপালি মাথা ব্যাথা :
আধ কপালি মাথা ব্যথা বা মাইগ্রেন হলো এমন একটি বিশেষ ধরনের মাথা ব্যথা, যা সাধারণত মাথার একপাশে অনুভূত হয়। এটি বিভিন্ন কারণে হতে পারে, যেমন:
1. মানসিক চাপ বা উদ্বেগ :
অধিক মানসিক চাপ বা উদ্বেগ মাইগ্রেনের কারণ হতে পারে।
2. আলো বা শব্দে সংবেদনশীলতা :
বেশি উজ্জ্বল আলো বা উচ্চ শব্দ মাইগ্রেনের উদ্রেক করতে পারে।
3. খাদ্যাভ্যাস :
কিছু খাবার বা পানীয়, যেমন চকলেট, পনির, ক্যাফেইন, অ্যালকোহল ইত্যাদি মাইগ্রেন সৃষ্টি করতে পারে।
4. ঘুমের অভাব :
পর্যাপ্ত ঘুম না হলে বা ঘুমের অভাব হলে মাইগ্রেন হতে পারে।
5. হরমোনের পরিবর্তন :
মহিলাদের মধ্যে হরমোনের পরিবর্তন, যেমন মাসিক চক্র, গর্ভাবস্থা, অথবা মেনোপজের সময় মাইগ্রেন হতে পারে।
প্রতিকার :
1. আরাম করা : অন্ধকার ও শান্ত পরিবেশে বিশ্রাম নিন।
2. ঔষধ : মাইগ্রেনের জন্য নির্ধারিত ঔষধ গ্রহণ করুন।
3. ঠান্ডা বা গরম প্রয়োগ : মাথায় ঠান্ডা বা গরম সেঁক দিতে পারেন।
4. পর্যাপ্ত পানি পান : শরীরে পানির অভাব মাইগ্রেনের কারণ হতে পারে, তাই পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
5. স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট : স্ট্রেস কমানোর জন্য যোগব্যায়াম বা মেডিটেশন করতে পারেন।
মাইগ্রেন সমস্যা নিয়মিত হলে বা ব্যথা নিয়ন্ত্রণে না আসলে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
মাথা ব্যথা কমানোর ১০টি ঔষধের নাম :
মানুষের অনেক সাধারণ সমস্যার মধ্যে অন্যতম একটি হল মাথাব্যথা। শরীরের নানা সমস্যার কারণে মাথাব্যথা দেখা দিতে পারে। যদিও এটি মারাত্মক ব্যথা নয়, তবে এটি খুবই অস্বস্তিদায়ক।
মাথা ব্যথা থাকলে মন ভালো থাকে না এবং কোন কাজেই মন বসে না। আজ আমরা আমাদের পাঠকদের জন্য দশটি মাথা ব্যথার ঔষধের নাম এবং এদের দাম নিচে তুলে ধরছি:
1. **Anilic (এনিলিক)** 200 mg, Drug International Ltd. দাম: ৳ 8.00
2. **Arain (আরিন)** 200 mg, Opsonin Pharma Ltd. দাম: ৳ 10.00
3. **Migratol (মিগ্রাটল)** Tablet 200 mg, Beacon Pharmaceuticals Ltd. দাম: ৳ 10.00
4. **Migrex (মিগরেক্স)** Tablet 200 mg, Incepta Pharmaceuticals Ltd. দাম: ৳ 10.00
5. **Minopa (মিনোপা)** Tablet 200 mg, Medicon Pharmaceuticals Ltd. দাম: ৳ 7.39
6. Mygan (মাইগান) Tablet 200 mg. Chemist Laboratories Ltd.
7. **Namitol (নামিটোল)** Tablet 200 mg, ACI Limited. দাম: ৳ 10.00
9. **Tolfi (টলিফ)** Tablet 200 mg, Benham Pharmaceuticals Ltd. দাম: ৳ 9.50
9. **Tolmic (টলমিক)** 200 mg, Beximco Pharmaceuticals Ltd. দাম: ৳ 8.03
10. **Tufnil (টাফনিল)** Tablet 200 mg, Eskayef Bangladesh Ltd. দাম: ৳ 10.00
এই ঔষধগুলি কিনতে আপনি আপনার নিকটস্থ যে কোন ফার্মেসিতে যেতে পারেন। ঔষধ কেনার সময় খুবই সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত এবং ফার্মাসিস্টের পরামর্শ নেওয়া উচিত, যেন আপনি আপনার জন্য উপযুক্ত ঔষধটি পান। মাথা ব্যথার ঔষধগুলি যথাযথভাবে এবং নির্দেশনা অনুযায়ী সেবন করুন, যাতে আপনার সমস্যা সঠিকভাবে নিরাময় হয়।
মাইগ্রেন এর ব্যাথা কমানোর উপায় :
মাথাব্যথা এমনিতেই বেশ কষ্টদায়ক, আর মাইগ্রেনের ব্যথা হলে তো কথাই নেই। যাঁরা এই সমস্যায় ভুগছেন, তাঁরা জানেন মাইগ্রেন কতটা যন্ত্রণাদায়ক হতে পারে। এতে সাধারণত মাথার একপাশে প্রচণ্ড ব্যথা হয় এবং সঙ্গে বমি বমি ভাব থাকে। কখনো কখনো আরও জটিল উপসর্গ দেখা দিতে পারে। মাইগ্রেনের ব্যথা হলে বেশিরভাগ মানুষ অন্ধকার ঘরে বিশ্রাম নিলে বা ঘুমালে কিছুটা আরাম পান। কিন্তু যাঁরা কাজে ব্যস্ত, তাঁদের ক্ষেত্রে হঠাৎ এই ব্যথা শুরু হলে বিষয়টা ভীষণ কষ্টকর হয়ে পড়ে।
দুঃখজনকভাবে, মাইগ্রেনের স্থায়ী কোনো চিকিৎসা নেই। তবে কিছু খাবার বেছে চললে এবং জীবনযাপনের কিছু নিয়ম মানলে এই ব্যথার প্রকোপ কমানো সম্ভব। কিছু দীর্ঘমেয়াদি ওষুধও কাজে দেয়। তীব্র ব্যথা হলে অন্ধকার জায়গায় বিশ্রাম নিলে, পর্যাপ্ত তরল খাবার খেলে খানিকটা আরাম পাওয়া যায়। এসময় কম্পিউটার বা মোবাইল স্ক্রিনে তাকানো এড়িয়ে চলা ভালো। মাথায় ঠান্ডা পানি, বরফ বা ভেজা কাপড় দিয়ে ব্যথা কমানো যায়। এছাড়া ভেষজ তেল বা স্থানীয় ব্যথানাশক মালিশ করেও খানিকটা আরাম পাওয়া সম্ভব।
অনেকে হালকা গরম চা বা ভেষজ চা খেয়ে আরাম পান। মাইগ্রেনের ব্যথায় প্রথমে ব্যথানাশক হিসেবে প্যারাসিটামল বা অ্যাসপিরিনজাতীয় ওষুধ খাওয়া যেতে পারে। সঙ্গে ডমপেরিডনজাতীয় বমির ওষুধও খাওয়া যেতে পারে। এতে অনেকেই সুস্থ বোধ করেন। তবে কেউ কেউ এতে তেমন আরাম না পেলে ট্রিপটান গোত্রের ওষুধ ব্যবহার করতে পারেন। এসব ওষুধ নির্দিষ্ট সময়ে খেলে অনেকের ক্ষেত্রে ভালো ফল দেয়।
তবে কিছু কিছু মানুষের জন্য মাইগ্রেনের ব্যথা বেশ জটিল হতে পারে এবং কোনোভাবেই আরাম পাওয়া যায় না। এর জন্য আরও কিছু নতুন ওষুধ ব্যবহার করা হয় এবং আরও কিছু ওষুধ নিয়ে গবেষণা চলছে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্বল্প সময়ে পুরোপুরি আরাম পাওয়া বেশ কঠিন। তাই খাবারদাবার নিয়ন্ত্রণ, যেমন চকলেট, কফি, চিজ ইত্যাদি কম খাওয়া, অনিদ্রা, দুশ্চিন্তা, অতিরিক্ত পরিশ্রম, দীর্ঘ সময় টিভি বা কম্পিউটারে সময় ব্যয় ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করা, কিছু ওষুধ নিয়মিত সেবন করার মতো পন্থা অবলম্বন করলে মাইগ্রেনের ব্যথা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। মনে রাখতে হবে, মাইগ্রেনের ব্যথা খুব তীব্র আর যন্ত্রণাদায়ক হলেও এটি মারাত্মক কোনো রোগ নয়।
মাথা ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় :
মাইগ্রেনের ক্ষেত্রে অনেকের মাথার শুধুমাত্র একটি অংশ ব্যথা করে, আবার অনেকের সমগ্র মাথায় ব্যথা হয়। পুরো মাথা ব্যথা করা ব্যক্তিদের সমস্যাটি আরও গুরুতর হয়ে ওঠে।
মাইগ্রেন কেন হয়, তা নিয়ে নানা গবেষণা চলছে, কিন্তু এখনো সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে কিছু বিষয় যেমন গন্ধ, খাবার, আলো, ও দুশ্চিন্তা মাইগ্রেনকে ট্রিগার করে এবং অসহ্য যন্ত্রণা শুরু হয়। সূর্যের প্রখর তাপ, টানা কম্পিউটার বা মোবাইলের সামনে বসে থাকা, কম ঘুম, দুশ্চিন্তা, চোখের ক্লান্তি, সাইনাস প্রদাহ বা মস্তিষ্কের রক্তনালিতে কোনো সমস্যা থেকেও মাইগ্রেন হতে পারে। কখনো কখনো তীব্র মাথাব্যথার সঙ্গে বমি ভাব, চোখে যন্ত্রণা এবং মুখ ও চোয়ালে ব্যথা হতে পারে।
এ সমস্যা সমাধানে কিছু ঘরোয়া উপায় ব্যবহার করতে পারেন। ওষুধ ছাড়াও মাইগ্রেনের ব্যথা কমানোর জন্য কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারেন:
১. আদার মধ্যে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা মাইগ্রেনের সমস্যা কমাতে পারে। মাইগ্রেনের ব্যথা শুরু হলেই এক কাপ আদা চা খেতে পারেন। চাইলে কাঁচা আদাও রোজ সকালে খেতে পারেন।
২. অশ্বগন্ধা, একটি গুরুত্বপূর্ণ ভেষজ, মাইগ্রেনের সমস্যায় কার্যকরী হতে পারে। অশ্বগন্ধা পানিতে ফুটিয়ে, দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন।
3. লবঙ্গের মধ্যে অনেক উপকারী উপাদান রয়েছে যা মাইগ্রেনের সমস্যা দূর করতে পারে। লবঙ্গ চিবিয়ে বা লবঙ্গের পাউডার দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন।
৪. ল্যাভেন্ডার তেলের অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি গুণ মাইগ্রেন কমায়। মাইগ্রেনের ব্যথা উঠলে এই তেলে ১৫ মিনিট শ্বাস নিতে হবে।
৫. মাইগ্রেনের সমস্যা কমাতে ব্যায়াম বা ইয়োগা করতে হবে।
৬. চেরি ফলের জুস মাইগ্রেন নিয়ন্ত্রণে উপকারী। চেরিতে প্রচুর পরিমাণে পলিফেনলস নামের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে যা স্ট্রেস দূর করে এবং মাথাব্যথা কমায়।
৭. মাশরুমও মাইগ্রেনের ব্যথা কমাতে সহায়ক। মাশরুমে ম্যাগনেশিয়াম ও রিবোফ্লাভিন থাকায় মাইগ্রেনের ব্যথা কমে।
এগুলো ব্যবহার করে মাইগ্রেনের ব্যথা কমানো সম্ভব।